০১। ভূমিকা
নারীদের প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, বাল্যবিবাহ রোধ, যৌতুকের জন্য মারধর এবং মেয়েদের প্রতি ইভটিজিং প্রতিরোধ ০৫ আগষ্ট ২০১৫ তারিখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সম্পূর্ণ নারী বান্ধব পরিবেশে নারী অফিসার ও ফোর্সের সমন্বয়ে এর সেলটি যাত্রা শুরু করে। ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সর্বমহলে এর কার্যক্রম এবং পরিচালনা পদ্ধতি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। নারীদের প্রতি অপরাধ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে না দেখে সামষ্টিক সামাজিক সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে তার মূলে কাজ করারই মূলত: এ সেলের উদ্দেশ্য।
০২। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অপরাধ প্রেক্ষাপট:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে দূরবর্তী জেলা এবং ঢাকা ও সিলেট বিভাগের সাথে এটি সংযুক্ত। জেলার ০৩ (তিন) টি উপজেলা যথাক্রমে বিজয়নগর, কসবা, আখাউড়া ভারতের সীমানার সাথে সংযুক্ত । ভৌগলিক অবস্থা এবং অতীত বৈশিষ্ট্যের কারনে সুদীর্ঘকাল হতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা একটি অপরাধ প্রবণ জেলা হিসাবে পরিচিত। সীমান্তের কারনে এখানে মাদকের যেমন প্রকোপ বেশী একইসাথে অতীত বৈশিষ্ট্যের ও গোষ্ঠীগত আধিপত্যের কারনে দাঙ্গাপ্রবন এলাকা হিসাবে পরিচিত। সামাজিক অস্থিরতা, প্রতিবেশী দেশের প্রভাব, ভৌগলিক অবস্থা ইত্যাদি কারণে নারী নির্যাতনেও এ জেলা সারা বাংলাদেশে একটি আলোচিত ভূমন্ডল হিসাবে বিবেচিত।
০৩। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি:
নারীদের প্রতি অপরাধ বিশেষ করে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতন একটি পুরোনো ও জটিল সমস্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি মেয়ে স্বামীর পরিবার কর্তৃক ক্রমাগত অত্যাচারিত হওয়ার শেষ পর্যায়ে এসে থানায় মামলা রুজু করে। এ ধরনের মামলা হওয়ার পর সাধারণত এ পরিবারটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ফলে পুরো পরিবোরের উপর বিপর্যয় নেমে আসে। সামাজিক ভাবে এ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয় নাই। মামলার দীর্ঘসূত্রীতা, বিচারে বিলম্ব এ সমস্যা আর ও প্রকট করেছে। এই জটিল বিষয়টি সামনে রেথে ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গিতে চিন্তা করা হয়। যদি মামলা রুজু হওয়ার পূর্বেই দু'টি পক্ষকে সামনে রেখে কাউন্সিলিং করা এবং মামলা ছাড়াই দ্রুত সময়ে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় তাহলে হয়ত: অনেক পরিবাকে বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হত। এছাড়া ও নারীরা তাদের অনেক সমস্যার বিষয়ে যেমন ইভটিজিং, বিভিন্ন বখাটেদের মাস্তানী, স্বামীগৃহে বিভিন্ন বিরূপ পরিবেশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাতে আগ্রহী হয় না। ফলে সমস্যা দিন দিন প্রকট হয়। সুতারাং নারীদের জন্য যদি এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় যেখানে তারা তাদের অভিযোগ জানাতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে এবং দ্রুত প্রতিকার পাবে তাহলেই নারীর বিরুদ্ধে সহিসংতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
০৪। ব্রাহ্মণবাড়িয়া উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টার:
০১ (এক) জন মহিলা পুলিশ পরিদর্শক, ০১ (এক) জন মহিলা এএসআই, ০২ (দুই) জন মহিলা কনস্টেবল নিয়ে উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারটি কাজ করে যাচ্ছে। জটিল বিষয়সমূহ পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হচ্ছে এবং পুলিশ সুপার ব্যক্তিগত ভাবে দু'পক্ষের সাথে আলোচনা করে সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
০৫। উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের কর্মপদ্ধতি:
জেলার ০৯ (নয়) টি থানাতেই পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। যৌতুকের জন্য যে কোন মামলার অভিযোগ থানায় সরাসরি মামলা রুজু না করে অভিযোগকারী পক্ষ ও বিবাদী পক্ষ'কে একসাথে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেরণ করে। উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের অফিসারবৃন্দ ০২ পক্ষের সমস্ত যুক্তিতর্ক শুনে মিমাংসা করার চেষ্টা করবে, মিমাংশা না হলে পুলিশ সুপারের কাছে পাঠাবে এবং পুলিশ সুপার নিজে কাউন্সিলিং করে সমাধানের চেষ্টা করবে।
০৬। উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের বৈশিষ্ট্যঃ
০৭। উপসংহার:
উইমেন্স সাপোর্ট সেন্টারের যাত্রা শুরুর পর নারী নির্যাতনের মামলা ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু মামলা হ্রাস করা এ সেন্টারের উদ্দেশ্য নয়। দ্রুততার সাথে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করাই এ সেন্টারের মূল উদ্দেশ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। একটি সংসার ভেঙ্গে যাওয়া নয় সংসার টিকে রাখা এ সেন্টারের মূল উদ্দেশ্য। কোন ক্ষেত্রে সংসার টিকেই রাখা কোন ভাবেই সম্ভব না হলে এখানে বসেই ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেন মোহর ও খোরপোষের টাকা পরিশোধ করে বিচ্ছেদ ঘটানো হচ্ছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস